কথিত আছে জীবজগতে মনুষ্যজন্ম শ্রেষ্ঠ জন্ম তাই এই জন্মে শুধু আমি বা আমার এই চিন্তাধারার গণ্ডির বাহিরে গিয়ে কিছু করার প্রয়াসে, যা কিনা আবহমানকাল হতে মুনিঋষিরা করে এসেছেন মানব কল্যাণের হৃতসাধনে।
আমাদের ভারতবর্ষে সর্বস্তরের ধর্মকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে সে আদালতের কাঠগড়াই হোক কিংবা অপারেশনের ক্লান্ত ডাক্তারের মুখ হোক না কেন। হয়ত এর কোনও ব্যাখ্যা নেই তাই হয়তো গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু ও কাবেরীর জলকে অমৃতজ্ঞানে মুমুর্ষের মুখে দিয়ে চিরঅমৃতের পথে যাত্রা করানো হয়।
সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের মধ্যে দিয়ে এই গতিময় জগতে চলছে পরিবর্তন ও বিবর্তন, কিন্তু কল্পনার আঙ্গিকে, সৃষ্ট তেত্রিশ কোটি দেব দেবীগণ যেন সত্যিই সমুদ্র মন্থনের অমৃত পান করে আজও অমর হয়ে আছেন মানবজগতের আত্মরক্ষার কেন্দ্রস্থলে যা যুগ-যুগান্ত ধরে আজও স্ব-মহিমায় বিরাজমান।
বিজ্ঞান যদিও এই আলৌকিক অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু তাদের বৈজ্ঞানিক ঢঙে সৃষ্ট দেব-দেবীগণ পূজিত হচ্ছেন মানবকল্যাণের জন্য সারা বিশ্বে বিভিন্ন রূপে, ধর্মে, আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
মহামুনি মারকেন্ডও, যিনি সপ্তকল্পজীবী হয়েছিলেন। স্বয়ং দেবাদিদেবের আশীর্বাদে, তিনি নর্মদা মহাত্ম্যে বলেছিলেন, গঙ্গা স্নান করলে পাপের বিনাশ হয় নর্মদা দর্শনেই সকল জীব মুক্তি প্রাপ্ত হয়।
আধ্যাত্মিক ভাবধারায় অনুপ্রানিত, যাই কিছু করা হোক না কেন সেখানে চাওয়া বা পাওয়ার কোন অবস্থান নেই। তাই চিরপ্রশান্তির আশায় উদ্ভুত কোন ব্যাক্তির পর হল নর্মদার উপাসনা । কারন মা নর্মদা হলেন মক্ষদায়িনী ।
হিসাবের খাতিয়ান নয়, পাবার আকাঙ্ক্ষাও নয়, চাই শুধু ভক্তি ও ভালোবাসা। তাহলেই নর্মদা দর্শন সার্থক হবে ।
মহামুনি মার্কেন্ডেয়, যিনি সপ্ত কল্পজীবি হয়েছিলেন স্বয়ং দেবাদিদেবের আশীর্বাদে, তিনি নর্মদা মাহাত্বে বলেছেন “ গঙ্গায় স্নান করলে পাপের বিনাশ হয়।
নর্মদা দর্শনেই সকল জীব পাপ হইতে মুক্তি লাভ করে।“
সমুদ্র মন্থনে ওঠা গরল পান করেছিলেন দেবাদীদেব মহাদেব, সেই হলাহল বিষের জ্বালা জোরানোর জন্য মহাদেব বিন্ধ পর্বতে তপস্যায় রত হন। দীর্ঘ তপস্যার ইতি ঘটলে তার কন্ঠ হইতে আবির্ভূত হন শীবাত্বজো দেবী নর্মদা ।
নর্মদার উৎস অমর কন্টকে, এবং গুজরাটের কচ্ছে ভৃগু সমুদ্রে মিলিত হয়েছে । প্রেক্ষাপটেরও, অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে । কিন্তু পরিবর্তন ঘটে নাই চিরন্তন সত্যের, অর্থাৎ সত্যম শিবম সুন্দরমের যাহা কিনা এক কথায় বলা যাইতে পারে সুন্দর সত্যইশিব। স্বামী বিবেকানন্দের কথায় জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। এই উক্তির প্রভাবে অনুপ্রানিত হয়ে আমরা শিব কন্যা নর্মদার স্মরন নিয়ে মানব সেবায় তথা সমাজের পক্ষে এক স্বয়ং সম্পূর্ণ পরিবেশ গঠনে ব্রতী হইয়াছি।
দীঘার সমুদ্র সৈকতে উপস্থাপিত করা হইয়াছে মা নর্মদার মন্দির, তথা উপাসনার স্থল ২০১০ সালে। প্রতি বছর ২৬ শে জানুয়ারী মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে উৎসব-উদজাপীত ও ভক্ত সমাবেশ হইয়া থাকে।।
—এই হল নর্মদা উপাক্ষাণ ।
নর্মদার উৎসস্থল বিদ্ধ্যপর্বত ও সাতপুরা পর্বতমালার মধ্য দিয়ে নর্মদা পশ্চিমীগামিনী হয়ে আরব সাগরে গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত ভারোচ বা ব্রোচে গিয়ে মিলিত হয়েছে, এই স্থানের নাম ভৃগুকচ্ছ। নর্মদার উত্তরে বিন্ধ্যপর্বত ও দক্ষিণে সাতপুরা পর্বতমালা।
আটশতের মাইল দীর্ঘ নর্মদার তিন চতুর্থাংশ মধ্যপ্রদেশ। মধ্যপ্রদেশের শাডোল, মান্দালা, নরসিংহপুর, হেসেঙ্গাবাদের খান্ডেয়া খরগোশ জেলাপতিক্রম করে নর্মদা গুজরাট প্রদেশে গিয়ে পড়েছে, গুজরাটের ব্রোচেই হচ্ছে নর্মদার সাগরসঙ্গম। অমরকণ্টক মধ্যপ্রদেশের শাডোল জেলার অন্তর্গত। উত্তরে শাডোল, দক্ষিণ-পশ্চিমে মান্দালা, দক্ষিণ-পূর্বে বিলাসপুর এই তিন জেলার মাঝামাঝি স্থানে অমরকন্টক। উত্তরে অনুপপুর, পূর্বে পেনড্রা ও পশ্চিমে ডিনডোরী থেকে সরাসরি অমরকণ্টক পৌঁছানো যায়।
আমরকণ্টক এখনও একটি ছোট পাহাড়ী উপত্যকা নর্মদা মন্দিরকে কেন্দ্র করেই, তার পরিধি। শ্বেত ও শুভ্রমন্দির, যেন একগুচ্ছ মন্দিরের সমারোহ। মন্দিরের মাঝখানে, নর্মদার উৎগম মন্দির। যা কিনা আট কোনা এক সরোবরের উপস্থাপনা করেছে। প্রাচীনকালে এখানে একটি বাঁশ গাছের বন ছিল। এখান থেকেই অবিরাম ধারায় মা নর্মদার স্থুল রূপ, “জলরূপ” নির্গত হয়ে চলেছে।
বর্তমানে দীঘার সমুদ্র সৈকতে, হাওড়া নর্মদা ফাউন্ডেশন, মা নর্মদার এক বিশাল দৈবীমূর্তির উপস্থাপনা করেছে।